বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১০

বুয়েট এ ভর্তি হতে চাইলে কি করতে হবে?

ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো সেরাদের সেরা বাছাই করা। আর বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা মানেই তো অন্য কিছু। দেশসেরা শিক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধ রূপ নেয় মহারণে। পছন্দের বিষয় পেতে হলে কিন্তু মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকতে হবে। ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকসের কথাই ধরা যাক। প্রথম ২০০ জনের মধ্যে থাকলে এ বিষয়টি পেতে পারো। তাই বলে ভেব না, বুয়েটের অন্য বিষয়গুলো কম জনপ্রিয়।

এত্ত সহজ নয়
বুয়েটের আসনসংখ্যা ৯৬৫। এর মধ্যে উপজাতি ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চারটি আসন সংরক্ষিত থাকে। বুয়েটে ভর্তির ক্ষেত্রে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি_এ চারটি বিষয়ের জিপিএর যোগফল ১৯ চাওয়া হয়েছিল। জিসিই ও লেভেলের ছাত্রদের ক্ষেত্রে পদার্থ, রসায়ন, গণিত, ইংরেজি_এ চারটি বিষয়সহ পাঁচটি বিষয়ে কমপক্ষে বি গ্রেড থাকতে হবে। জিসিই এ লেভেলের ক্ষেত্রে গণিত, পদার্থ, রসায়নে এ গ্রেড ও অন্যান্য বিষয়ে নূ্যনতম বি গ্রেড থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি কোনোটিতেই জিপিএ ৪-এর নিচে হলে আবেদন করতে পারবে না।

মূল পরীক্ষা লিখিতই
৬০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় যারা ভালো করবে তারাই ভর্তির সুযোগ পাবে দেশসেরা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গণিত, পদার্থ, রসায়ন, ইংরেজি_এ চারটি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হবে। পরীক্ষার নম্বর-বিন্যাস পদার্থ ১৮০, রসায়ন ১৮০, গণিত ১৮০, ইংরেজি ৬০। পদার্থ, গণিত ও রসায়ন এই তিনটি বিষয়ের প্রতিটিতে নয়টি লিখিত ও ৩৬টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। ইংরেজিতে তিনটি লিখিত ও ১২টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি লিখিত প্রশ্নে ১০ নম্বর ও এমসিকিউ প্রশ্নে ২.৫ নম্বর থাকে। নৈর্ব্যক্তিকে ভুল উত্তরের জন্য ২৫ শতাংশ নম্বর কাটা যাবে। সময় তিন ঘণ্টা। প্রথম দেড় ঘণ্টা রচনামূলক ও পরের দেড় ঘণ্টা নৈর্ব্যক্তিক। মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি। সুতরাং সময় বণ্টনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার হলে অনেকেরই প্রশ্ন বুঝতে বুঝতেই সময় চলে যায়। প্রথম পাঁচ মিনিট প্রশ্ন খুব ভালো করে পড়তে হবে। শুধু মেধাবী হলেই হবে না, পরীক্ষায় বুদ্ধি ও কৌশলেও এগিয়ে থাকতে হবে। যে যত বেশি টেকনিক জানে, সেই ভর্তি পরীক্ষায় তত ভালো করতে পারে।

পদার্থের জন্য একাধিক বই
পদার্থবিজ্ঞানের জন্য একটা বই পড়লেই হবে_এ কথাটি যদি বিশ্বাস করো, তাহলে খুব ভুল করবে। এর জন্য দু-তিনটি বই পড়তে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের তপন, ইসহাক, গিয়াস স্যারের বইয়ের অঙ্কগুলো সমাধান করতে হবে। খুব দ্রুত অঙ্ক কষার অভ্যাস করতে হবে। গাণিতিক সমস্যার সমাধান ক্যালকুলেটরেই করতে হবে। খাতায় জায়গা থাকবে না। অঙ্কগুলো একটু ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। তাই খুব দ্রুত অঙ্ক বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মনে রাখতে পারলে আর কোনো ভয় নেই। আর থিওরিগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। কোনো বিষয় না বুঝলে সিনিয়র কারো সাহায্য নিতে পারো।

রসায়নের প্রতিটি অধ্যায়
রসায়ন যত বেশি চর্চা করবে, তত ভালো করতে পারবে। এ বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের হাজারী নাগ, কবির ইসলাম স্যারের বই দুটি ভালোভাবে পড়তে হবে। প্রথম পত্র থেকে গাণিতিক সমস্যা আসবে। সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। বিক্রিয়াগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। বিভিন্ন প্রস্তুতি, সংকেত, রূপান্তর, বিক্রিয়া ইত্যাদির ছক করে নিলে মনে রাখতে সুবিধা হবে। ছোট বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। দ্বিতীয় পত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে। এখান থেকেই প্রশ্ন হবে বেশি। দ্বিতীয় পত্রে প্রচুর বিক্রিয়া, পরীক্ষাগার প্রস্তুতি, শিল্পোৎপাদন, সংকেত, রূপান্তর পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে হাইড্রোকার্বন, অ্যামিন, অ্যারোমেটিক যৌগগুলোর রসায়ন, জৈব যৌগের সূচনা, অ্যালডিহাইড, কিটোন অধ্যায়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। জৈব রসায়নের প্রতিটি অধ্যায় ধারাবাহিকভাবে পড়ে যেতে হবে। 'একটা অধ্যায় ফেলে আরেকটা অধ্যায় পড়া'_এটা কোনোভাবেই করা যাবে না।

গণিতে বারবার চর্চা
পদার্থের মতো এখানেও দু-তিনটি বইয়ের অঙ্ক করতে পারলে ভালো। গণিত প্রথম পত্রে জটিল সংখ্যা, ত্রিকোণমিতির ওপর জোর দিতে হবে। ত্রিকোণমিতির সূত্রগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার যোগসূত্র আছে। দ্বিতীয় পত্রে বলবিদ্যার ক্ষেত্রে একই কথা। বলবিদ্যার অঙ্কগুলো বুঝে করতে হবে। আফসার উজ জামান স্যারের বইয়ের অঙ্কগুলো করতে পারো। ক্যালকুলাসের সূত্রগুলো মনে রাখতে হবে।

ইংরেজিতে আগের পড়াই
ইংরেজিতে দুটি কমপ্রিহেনশন, আট-দশটি ফ্রেজ ও ইডিয়মস এবং শূন্যস্থান পূরণ থাকে। মূল প্যাসেজটি ভালোভাবে বুঝতে পারলে কমপ্রিহেনশনের প্রশ্নগুলোর উত্তর সহজেই করা যায়। শূন্যস্থান পূরণও বেশ সহজ। তবে ফ্রেজ ও ইডিয়মস একটু কঠিন হয়। এর জন্য শিক্ষার্থীদের ফ্রেজ ও ইডিয়মস ভালোভাবে পড়তে হবে। স্থাপত্য বিষয়ের জন্য আরো ৪০০ নম্বরের মুক্তহস্ত অঙ্কন পরীক্ষা দিতে হয়।

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করবে। এতে যেমন পরীক্ষার প্রশ্ন সম্বন্ধে ধারণা তৈরি হয়, তেমনি আত্মবিশ্বাস বাড়ে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে মডেল টেস্ট দিতে পারো। এতে নিজেকে যাচাই করে নিতে পারবে। সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করা যাবে না। যারা মনে করছে, শেষ মুহূর্তে সাজেশন ধরে প্রস্তুতি নেবে, তাদের উদ্দেশে বলব, বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়াটাই বৃথা হবে। অনেকেই বিভিন্ন গাইড বইয়ের ওপর নির্ভর করে প্রস্তুতি নেয়। এটা আদতে কোনো সুফলই বয়ে আনবে না। মূল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই_এ কথাটি বারবার মনে করিয়ে দিই।
অনেকেই পড়ার চাপ কুলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শেষমেশ আর পরীক্ষাই দিতে পারে না। এ বিষয়টা মাথায় রাখবে। ভর্তি পরীক্ষার আগের কয়েকটা দিন মনকে প্রফুল্ল রাখতে হবে। বই পড়া, টেলিভিশন দেখা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে নিজেকে চাঙ্গা রাখতে পারো। পরীক্ষার আগের রাতে একটু আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়বে।

ভর্তি তোমার ঠেকায় কে!
পরীক্ষার দিন খুব ফুরফুরে মন নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে। ক্যালকুলেটর, পেনসিল, রাবার, কলম, অ্যাডমিট কার্ড ঠিকমতো নিয়েছ কি না দেখে নেবে। অনেকে উত্তেজনাবশে অ্যাডমিট কার্ড ফেলেই পরীক্ষা দিতে চলে যায়। পরীক্ষার খাতায় ঠিকঠাক মতো রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও রোল নম্বর ঠিকমতো লিখবে। আর একটি কথা! অনেকেই ভর্তি পরীক্ষার আগে হীনম্মন্যতায় ভোগে। ভাবে, এত মেধাবীদের ভিড়ে টিকব কী করে! এই ভ্রান্ত ধারণা ঝেড়ে ফেলে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। এত দিনের প্রস্তুতি তোমার। তোমার ভর্তি ঠেকায় কে! বিস্তারিত তথ্যের জন্য বুয়েটের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে পারো। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ অক্টোবর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

review http://www.carzon.tk on alexa.com